আপনি কি তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন খুজতেছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের জন্য। আজকের আর্টিকেলে তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করব। তো চলুন শুরু করি।
তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন
প্রশ্ন-১. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির যে বিষাদঘন একাকিত্বের বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবি সুফিয়া কামাল রচিত ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতাটিতে মানব মনের বেদনামথিত শোকের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে। প্রিয়জন হারিয়ে একাকী জীবনযাপন করতে থাকা কবি এতটাই উদাসীন হয়ে পড়ে যে প্রকৃতিতে শীত বিদূরিত হয়ে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবি টের পান না। কবিভক্তরা তাঁকে বসন্ত বন্দনামূলক গান রচনা করতে অনুরোধ করলেও সাড়া দেন না কবি। কারণ কবির মনে যে বিষাদময় স্মৃতি বার বার ফিরে আসে তা কিছুতেই ভুলতে পারেন না কবি। কবির এই বিষাদময়তা ও একাকিত্বের প্রভাব তাঁর কাব্য সৃষ্টিতেও প্রভাব ফেলে।
প্রশ্ন-২. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ঋতুকে কীসের সাথে তুলনা করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। শীত ঋতুতে চারদিকে নিঃস্বতা ও রিক্ততার যে ছাপ পাওয়া যায় তাতে প্রকৃতিকে সন্ন্যাসীর মতো অলংকারহীন মনে হয়। কবি সুফিয়া কামাল তাঁর ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় শীতের রিক্ত ও জরাজীর্ণতাকে বোঝাতে শীত ঋতুকে মাঘের সন্ন্যাসী বলে উল্লেখ করেছেন। শীত ঋতুতে চারদিকে পাতাবিহীন গাছের যে প্রাকৃতিক নান্দনিকতা তৈরি হয় তা দৃশ্যত সন্ন্যাসীর মতোই মনে হয়।
প্রশ্ন-৩. ‘হে কবি নীরব কেন?’— কবি কোন কারণে নীরব ব্যাখ্যা করো?
উত্তর: প্রিয়জন হারানোর বিষাদময় স্মৃতি ভুলতে না পেরে কবি নীরব। প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন ঘটলেও কবির মনোজগৎ জুড়ে বিরাজ করছে শীতের রিক্ততা ও বিষণ্নতার ছবি। কবির মন দুঃখ ভারাক্রান্ত। শীতের করুণ বিদায়ের ফলে কবির মনে যে বেদনার ছায়াপাত রেখে গেছে তা কবি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এখানে প্রকৃতি ও মানবমনের মিলনের দিকটি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। কবির নীরবতার কারণটি যেন প্রকৃতির চিরাচরিত পরিস্থিতির মাঝেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। মূলত প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কাতর কবি স্বাভাবিকভাবেই নিরাসক্ত, নিরাবেগ ও নীরব হয়ে পড়েন।
প্রশ্ন-৪, কবি বসন্তের আগমনের কোনো সন্ধান রাখেননি কেন?
উত্তর: প্রিয়জনের আকস্মিক বিদায়ের কারণে উদাসীন কবি বসন্ত আগমনের কোনো সন্ধান রাখেননি। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ততা। কবির মন দুঃখ ভারাক্রান্ত তাই শীতের করুণ বিদায়কে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। এজন্য বসন্তের আগমন কবির মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য কবির কাছে অর্থহীন মনে হয়েছে বলেই কবি বসন্তের কোনো সন্ধান রাখেননি।
প্রশ্ন-৫. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় বর্ণিত প্রকৃতির রূপ বৈশিষ্ট্য কেমন?
উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতির স্বাভাবিক রূপ- বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছে। শীতের পরেই বসন্ত ঋতুর আবির্ভাব হওয়ার কথা। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী বসন্ত ঋতুর আগমন ঘটলেও কবি সেদিকে দৃষ্টি দেন নি। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কবি প্রকৃতির সৌন্দর্যকে ভুলে গিয়েছিলেন। কবিভক্ত বসন্তের আগমনের কথা কবিকে জানালেও কবি সেদিকে ভূক্ষেপ করেননি। বসন্তের আগমনে ঠিকই আমের মুকুল ও বাতাবি নেবুর ফুলের গন্ধে দখিনা বাতাস অধীর আকুল হয়েছে।
প্রশ্ন-৬. ‘অর্ঘ্য-বিরচন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘অর্ঘ্য-বিরচন’ বলতে বিচিত্র সাজ ও ফুলের সৌরভ উপহার দিয়ে প্রকৃতির বসন্ত-বরণকে বোঝানো হয়েছে। ‘অর্ঘ্য-বিরচন’— এর শাব্দিক অর্থ অঞ্জলি বা উপহার রচনা। বসন্তে প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়। এ সময় গাছে গাছে নানা রকম ফুল ফোটে। পাখির কলকাকলিতে প্রকৃতি মুখর হয়ে ওঠে। দখিনা বাতাসে ফুলের সৌরভ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অর্ঘ্য-বিরচন দ্বারা প্রকৃতির এই বিচিত্র সাজের মাধ্যমে বসন্তকে বরণ করে নেওয়াকেই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন-৭. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির উদাসীনতার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির উদাসীনতার কারণ হলো তাঁর প্রথম স্বামী ও কাব্যসাধনার প্রেরণা পুরুষের আকস্মিক মৃত্যু। প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে বিরাজ করছে শীতের রিক্ততা ও বিষণ্ন রূপ। কবি শীত ঋতুকে ভুলতে পারছেন না। তার এ ভুলতে না পারার কারণ প্রিয় স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যু। স্বামীর অকাল প্রয়াণে কবির হৃদয় দুঃখভারাক্রান্ত। আর এ কারণেই প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন সত্ত্বেও কবি উদাসীন।
প্রশ্ন-৮. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কোন ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। কবির সাহিত্য সাধনা সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর জীবনে প্রচণ্ড শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্যসাধনায় নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণ্নতা। কবিমন আচ্ছন্ন হয়ে যায় রিক্ততার হাহাকারে। ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ফুটে উঠেছে এমনই বিষাদময় রিক্ততার সুর।
প্রশ্ন-৯. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় কবি বসন্তকে কীভাবে উপলব্ধি করেছেন?
উত্তর: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ব্যথাতুর কবি শোকাচ্ছন্ন উদাসীনতায় বসন্তকে উপলব্ধি করেছেন। বসন্তের আগমনে প্রকৃতি ফুলের সাজে সাজলেও কবির মনজুড়ে আছে শীতের রিক্ততার ছবি। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। প্রিয়জনের বিয়োগব্যথায় ব্যথাতুর কবির মনে বসন্ত কোনো সাড়া জাগাতে পারেনি। তাই বিষণ্ন উদাসীন মনে কবি বসন্তকে উপলব্ধি করেছেন।
আরও পড়ুনঃ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা কবে হবে
প্রশ্ন-১০, ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনকে। কীভাবে সম্পর্কিত করা হয়েছে?
উত্তর: আলোচ্য কবিতায় প্রকৃতির রূপ ও ব্যক্তির হৃদয়ানুভূতির তারতম্যের বিচারে প্রকৃতি ও মানবমনকে সম্পর্কিত করা হয়েছে। শীতের রিক্ততা শেষে প্রকৃতি তার আপন নিয়মে ফুল-ফসলের বর্ণে- গন্ধে নিজেকে সজ্জিত করেছে। কবিভক্ত প্রকৃতির সে সৌন্দর্য উপলব্ধি করলেও প্রিয়জন হারানো কবি তা অনুভব করতে পারছেন। না। এ তারতম্য থেকেই প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের দিকটি স্পষ্ট হয়। হৃদয় শোকাচ্ছন্ন থাকায় বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য দিয়েও কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারেনি।
প্রশ্ন-১১. কবি বসন্ত-বন্দনাগীতি না গাইলেও বসন্তের আগমন ব্যর্থ হয়নি কেন?
উত্তর: প্রকৃতি সবসময় আপন নিয়মেই নিজেকে রাঙিয়ে তোলে, তাই কবি বসন্ত-বন্দনাগীতি না গাইলেও বসন্তের আগমন ব্যর্থ হয়নি। আলোচ্য কবিতায় ঋতুরাজ বসন্ত তার রূপসম্ভার নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে, চারদিকে দেখা যাচ্ছে বাসন্তী উন্মাদনা। বাতাবি লেবুর ফুল আর আমের মুকুলের গন্ধে চারদিক আমোদিত হয়েছে। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় উন্মনা কবি এসবের প্রতি আকর্ষণহীন, তাঁর কণ্ঠে বসন্তের বন্দনাগীতিও নেই। তবু বসন্তের আগমন ব্যর্থ হয়নি, কারণ প্রকৃতির স্বাভাবিক পটপরিবর্তন ব্যক্তিবিশেষের মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল নয়।
প্রশ্ন-১২. সুফিয়া কামাল ‘জননী’ সম্ভাষণে ভূষিত হয়েছেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সুফিয়া কামাল সাহিত্যসাধনার পাশাপাশি নারী আন্দোলনে ব্রতী হয়েছিলেন বলেই জননী সম্ভাষণে ভূষিত হয়েছেন। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে নিজেকে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন সুফিয়া কামাল। এর মধ্যেই আবার বাংলা ভাষা ও সাহিত্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেছেন তিনি। পরবর্তীকালে সাহিত্যসাধনার পাশাপাশি তিনি নারী আন্দোলনেও ব্রতী হয়েছিলেন। এ কারণে তাঁকে জননী সম্ভাষণে ভূষিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন-১৩. ‘ফাগুন যে এসেছে ধরায়’- উক্তিটি কী সংকেত বহন করে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : উল্লেখিত উদ্ধৃতিটি প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ও তার আবির্ভাবে রঙের প্রাবল্যের সংকেতকে বহন করে। বসন্ত এলেই প্রকৃতিতে খুশির জোয়ার নেমে আসে। গাছে গাছে। নতুন পাতা ও ফুলে প্রকৃতি যেন রঙে-রূপে অনন্য এক চিত্রময়তা পায়। এই অবস্থা প্রত্যক্ষ করে যেকোনো মানুষ প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন বার্তাকে বুঝতে পারে। তারা বুঝতে পারে পৃথিবীতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন হয়েছে।
প্রশ্ন-১৪. ‘ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?’— কবির কাছে কবিভক্তের এ প্রশ্ন জানতে চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটলেও কবি তাকে বরণ না করায় কবিভক্ত কবির কাছে এ প্রশ্ন করেন। প্রিয়জনকে হারিয়ে কবিমন বিষণ্ন হলেও প্রকৃতিতে মহাসমারোহে বসন্তের আগমন ঘটেছে। আমের মুকুল এবং বাতাবি লেবুর ফুলের গন্ধে দক্ষিনা বাতাস চারদিক মুখরিত করে তুলেছে। কিন্তু শোকাহত কবি প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য লক্ষ না করায় ঋতুরাজ বসন্ত তার আবেদন হারিয়েছে। কবির এই বসন্ত বিমুখতা কবি ভক্তের কাছে প্রত্যক্ষ হয়। তাই তিনি অনুযোগের সুরে কবির কাছে এ প্রশ্ন করেছেন।
প্রশ্ন-১৫. কবিতায় ‘পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ব্যক্তিমনের নিঃসঙ্গতায় প্রকৃতির মাঝে নিরানন্দ ও সঙ্গীহীন ভাব বোঝাতে প্রশ্নোক্তটি করা হয়েছে। শীত প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততা ও জীর্ণতার রূপ। এ সময় গাছের পাতা ঝরে যায়। গাছ হয় ফুলহীন। শীতের এ রূপকে বসন্তের বিপরীতে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতি বসন্তের আগমনে ফুলের সাজে নবরূপে সাজলেও কবিমন জুড়ে আছে শীতের রিক্ততার ছবি। শীত যেন সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর গায়ে পত্রপুষ্পহীন দিগন্তের পথে চলে গেছে। যেমনভাবে কবির প্রাণপ্রিয় স্বামী চলে গেছেন নীরবে না ফেরার দেশে।
উপরে তাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। কেউ কিছু না বুঝলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।