নতুন দেশ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

নতুন দেশ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : আজকে আমি আপনাদের সাথে কথা বলবো নতুন দেশ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর সম্পর্কে।আপনি যদি নতুন দেশ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হন তাহলে আমাদের এই পোস্টটি শেষপর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

প্রশ্ন ১। শীতের ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে হৃদিতা বেড়াতে যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে। সেখানকার সামুদ্রিক প্রবাল, সারি সারি নারকেল গাছ, মাছ ধরার বড় বড় নৌকা ওর মনে কৌতূহল জাগায়। দিগন্ত বিস্তৃত নীলাভ জলরাশি, পরিষ্কার আকাশ ওকে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে। ওর ইচ্ছে হয় সমুদ্রের নানা রঙের মাছের সঙ্গে খেলা করতে- আবার কখনাে বা আকাশে পাখি হয়ে উড়ে বেড়াতে।

ক. নীল আকাশের মাঝে সাজে?

খ. ‘থাকি ঘরের কোণে’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. হৃদিতার সেন্টমার্টিনে দেখা দৃশ্যে নতুন দেশ’ কবিতায় চিত্রিত কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকটি যেন নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে আছে।”- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। নীল আকাশের মাঝে পাহাড়-চূড়া সাজে।

খ। ‘থাকি ঘরের কোণে’ বলতে নতুন দেশ’ কবিতার ছেলেটির নিজের বাড়িতে আবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে।

‘নতুন দেশ’ কবিতার ছেলেটি প্রতিদিন ঘাটে এসে নৌকা দেখে। দেখে নৌকা ভাটার টানে মাঝনদীতে চলে গেছে। নতুন কোনাে দেশ বা নগর অভিমুখে পাড়ি জমিয়েছে। ছেলেটির মনে সেই নতুন দেশ, দেশের মানুষ সম্পর্কে কৌতূহল জাগে। তার মনে সাধ জাগে নৌকার মতাে সে-ও ভেসে ভেসে নতুন দেশে যাবে। কিন্তু ছেলেটিকে ঘরের কোণেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। তাই সে আক্ষেপের সঙ্গে বলে থাকি ঘরের কোণে।’

গ। হৃদিতার সেন্টমার্টিনে দেখা দৃশ্যে নতুন দেশ’ কবিতায় চিত্রিত প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক নিসর্গের দেশ। চারদিকে মনােরম পরিবেশ, দেশটিকে ঘিরে রেখেছে। বাংলার প্রাকৃতিক শােভা মনােমুগ্ধকর। বাংলাদেশের রূপসৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমিকের হৃদয়কে আনন্দে পূর্ণ করে।

উদ্দীপকের হৃদিতা সেন্টমার্টিন গিয়ে অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়। সে সেখানে সামুদ্রিক প্রবাল, সারি সারি নারিকেল গাছ, মাছ ধরার বড় বড় নৌকা দেখে। দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্রের জল, মাথার ওপর পরিষ্কার আকাশ দেখে হৃদিতা এক অন্য জগতে হারিয়ে যায়। উদ্দীপকের হৃদিতার দেখা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চিত্র আমরা নতুন দেশ’ কবিতায়ও দেখতে পাই। নতুন দেশ’ কবিতার ছেলেটির চোখ দিয়ে আমরা দেখি নদীর বুকে সারি সারি নৌকা চলার দৃশ্য। ছেলেটির কল্পনায় ভেসে ওঠে নীল সাগরের কথা, যার জলের ধারে সারি সারি নারকেলের বন। কবিতায় আরও চিত্রিত হয়েছে বিশাল নীল আকাশ, তার মাঝে পাহাড় ইত্যাদি, যা রূপসী বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরই প্রকাশ। তাই বলা যায়, হৃদিতার সেন্টমার্টিনে দেখা দৃশ্যে নতুন দেশ’ কবিতায় চিত্রিত প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। “উদ্দীপকটি যেন নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাবকে ধারণ করে আছে।”- উক্তিটি যথার্থ।

শিশু-কিশােররা সাধারণত কল্পনাপ্রবণ হয়। কল্পনার জগতে গিয়ে স্বপ্ন বুনতে ওরা ভালােবাসে। ওরা পৃথিবীর সবকিছু নিজের মতাে করে দেখতে চায়, বুঝতে চায়। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য উপভােগ করতে চায়। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চায়।

‘নতুন দেশ’ কবিতায় এক কিশাের ছেলের অজানাকে জানার সীমাহীন কৌতূহল এবং প্রকৃতির সব রহস্য উন্মােচন করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। ছেলেটি তার কৌতূহল থেকে প্রকৃতিকে নিজের মতাে করে কল্পনা করে নিয়েছে। কল্পনার মধ্য দিয়ে সে তার অজানা দেশের চিত্র এঁকেছে। ছেলেটির এই কল্পনার জগৎ সৃষ্টি ও প্রকৃতির অজানার প্রতি টান উদ্দীপকের হৃদিতার মধ্যেও বিদ্যমান। হৃদিতাও প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়। ওরও ইচ্ছে হয় মাছের সাথে খেলতে, পাখি হয়ে উড়তে।

উদ্দীপকের হৃদিতা ও নতুন দেশ’ কবিতার ছেলেটি উভয়েই কিশাের। তাই উদ্দীপক ও নতুন দেশ’ কবিতা ‘উভয় জায়গায়ই দুটি কিশাের মনের অব্যক্ত আনন্দ-কল্পনা-কৌতূহল প্রকাশ পেয়েছে। উভয় জায়গায় ফুটে উঠেছে কল্পনার রঙিন জগৎ, যা হৃদিতা ও ছেলেটির কল্পনায় তৈরি। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

২নং প্রশ্ন

প্রশ্ন ২। হাউই চড়ে যায় যেতে কে

চন্দ্রলােকের অচিনপুরে,

শুনব আমি ইঙ্গিত কোন

মঙ্গল হতে আসছে উড়ে।

পাতাল ফেড়ে নামব আমি

উঠব আমি আকাশ ছুঁড়ে,

বিশ্বজগৎ দেখব আমি

আপন হাতের মুঠোয় পুরে।

[তথ্যসূত্র : সংকল্প- কাজী নজরুল ইসলাম

ক. নৌকো কিসের টানে চলে?

খ. নতুন দেশ’ কবিতায় কী নিয়ে ছেলেটির কৌতূহল জাগে? বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকের কৌতূহলী কিশােরের সঙ্গে নতুন দেশ কবিতার কার সাদৃশ্য রয়েছে?

ঘ. দীপকটি নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক। নৌকো ভাটার টানে চলে।

খ। নতুন দেশ’ কবিতায় প্রকৃতির যাবতীয় রহস্য জানার প্রতি ছেলেটির কৌতূহল জাগে।

আমাদের এই বিশাল পৃথিবীতে রয়েছে অনেক অজানা রহস্য। কিশােররা সবসময়ই রহস্য উন্মােচন করতে চায়। তেমনিভাবে কবিতার কিশাের ছেলেটিরও প্রকৃতির নানান বিষয়ের ওপর কৌতূহলী মনােভাব দেখা যায়। নদীর জোয়ার-ভাটার টানে নৌকো কীভাবে ছুটে যায়, দূর দেশে কেমন মানুষ থাকে, দূর সাগরপাড়ের নারিকেল গাছ, পাহাড়ের চূড়া, নীল আকাশ ইত্যাদির প্রতি তার অনেক কৌতূহল ও জিজ্ঞাসা। তার কাছে মনে হয় দূরে হয়তাে নতুন কোনাে দেশ আছে, নানান ফুলে-ফলে সাজানাে হয়তাে সেই দেশ। সেখানে হয়তাে নতুন পশু, নতুন পােশাক পরা মানুষ এবং আরও অনেক কিছু আছে। এগুলাে ছেলেটির খুব জানতে ইচ্ছে করে।

গ। উদ্দীপকের কৌতূহলী কিশােরের সঙ্গে নতুন দেশ’ কবিতার কৌতূহলী ছেলেটির সাদৃশ্য রয়েছে।

জানার আগ্রহ মানুষকে অনেক দূরে নিয়ে যায়, অনেক বড় করে তােলে। কেননা জানার আগ্রহ থেকেই মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। মানুষ তাই প্রতিনিয়ত দূর থেকে দূরান্তে ছুটে চলে।

উদ্দীপকে অজানাকে জানার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। উদ্দীপকের কৌতূহলী কিশাের চন্দ্রলােকের অচিনপুরের রহস্য জানতে চায়। মঙ্গলগ্রহ থেকে আসা সংকেতের অর্থ জানতে চায়। পাতাল ফুড়ে নামতে চায়, আবার আকাশ ছুঁড়ে বের হওয়ার অদম্য প্রয়াস রয়েছে তার মাঝে। সূর্বোপরি বিশ্বজগৎকে খুঁটিয়ে দেখতে চায় সে নিজের মতাে করে। নতুন দেশ’ কবিতার ছেলেটির মাঝেও অজানাকে জানার অদম্য প্রয়াস রয়েছে। নদী দিয়ে বয়ে চলা নৌকো কোথায় যায়; সেখানকার মানুষ, গাছপালা কেমন সেটা জানতে চায়। সেখানে নতুন দেশ, নতুন মানুষদের জীবন কেমন সেসব সম্পর্কেও ছেলেটি জানতে চায়। এ ছাড়াও প্রকৃতির রহস্য, দূর সাগরপাড়ের রহস্যও সে জানতে চায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের কৌতূহলী কিশােরের সঙ্গে নতুন দেশ’ কবিতার কৌতূহলী ছেলেটির সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকটি ‘নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে মন্তব্যটি যথার্থ।

পৃথিবী এবং এর চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানান রহস্য। সেসব রহস্য আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ভাবায়। ভাবতে ভাবতে মন চায় সেই রহস্যের মাঝে হারিয়ে যেতে।

উদ্দীপকে অজানাকে জানা ও রহস্য উন্মােচন করতে চাওয়ার যে প্রয়াস তা ব্যক্ত হয়েছে। মূলত বিশ্বজগতের মাঝে আছে নানা রকমের রহস্য। এই রহস্যগুলাে মানুষকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে। আকাশ, পাতাল, সৌরজগৎ ইত্যাদির রহস্য মানুষকে খুব টানে। আর এই রহস্য উদ্ঘাটন করতেই মানুষের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। উদ্দীপকে মানব হৃদয়ের এই কৌতূহলের বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। নতুন দেশ কবিতায়ও এক কৌতূহলী ছেলের কথা প্রকাশ পেয়েছে। সে প্রকৃতির

রহস্য সম্পর্কে জানতে চায়। নদীর জোয়ার-ভাটা, সাগরের ঢেউ, প্রতিদিন ছুটে চলা নৌকার গন্তব্য সম্পর্কে সে জানতে চায়। তার কাছে মনে হয় দূরে কোনাে নতুন দেশ আছে; সেই দেশের মানুষ কেমন, তাদের প্রকৃতি, গাছপালা ইত্যাদি সম্পর্কে শিশুটি জানতে চায়। অর্থাৎ কবিতায় কৌতূহলের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে।

উদ্দীপকে বিশ্বজগতের রহস্য জানার আগ্রহ ব্যস্ত হয়েছে। নতুন দেশ’ কবিতায় প্রকৃতির রহস্যকে জানার আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি নতুন দেশ’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে।

৩ ২নং প্রশ্ন

মণ্ডা-মিঠাই তেততা সেথা, ওষুধ লাগে ভালাে;

অন্ধকারটা সাদা দেখায়, সাদা জিনিস কালাে।

ছেলেরা সব খেলা ফেলে বই নে বসে পড়ে;

মুখে লাগাম দিয়ে ঘােড়া লােকের পিঠে চড়ে!

ঘুড়ির হাতে বাঁশের লাটাই, উড়তে থাকে ছেলে;

বড়শি দিয়ে মানুষ গাঁথে, মাছেরা ছিপ ফেলে!

[তথ্যসূত্র : মজার দেশ- যােগীন্দ্রনাথ সরকার

 

ক. নৌকা কোথায় বাধা আছে?

খ. “জানি না কোন দেশে/পৌছে যাবে শেষে”- বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে নতুন দেশ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধর।

ঘ. “উদ্দীপকটি কি নতুন দেশ কবিতার কিশােরের সামগ্রিক চিন্তার প্রতিফলন।”- বিশ্লেষণ করে তােমায় উত্তরের পক্ষে যুক্তি দেখাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর :

ক। নদীর ঘাটের কাছে নৌকা বাঁধা আছে।

খ। ‘নতুন দেশ’ কবিতায় “জানি না কোন দেশে/পৌছে যাবে শেষে” চরণটির-মধ্য দিয়ে নৌকাটির অজানা কোনাে দেশে পৌঁছানাের কথা বলা হয়েছে।

কবিতায় ছেলেটি প্রতিদিন নদীতে গােসল করতে গিয়ে নদীর ঘাটে নৌকা দেখে। হঠাৎ আজ সে দেখে নৌকা মাঝনদীতে ভাসে। নৌকাকে মাঝনদীতে দেখে তার মনে কৌতূহল জাগে- নৌকাটি ভাটার টানে কোন অজানার দেশে যাবে। সে কৌতূহলােদ্দীপক দৃষ্টিতে নৌকার চলার পথে দিকে চেয়ে থাকে। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে ছেলেটির কৌতূহলপূর্ণ মনােভাব প্রকাশিত হয়েছে।

গ। উদ্দীপকের সঙ্গে নতুন দেশ’ কবিতার অন্য জগতের কল্পনা করার সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।

কল্পনা মাঝে মাঝে আমাদেরকে অনেক দূরে নিয়ে যায়। আমাদের মনকে নিয়ে যায় আলাদা একটি জগতে। সেখানে মানুষ নিজের ইচ্ছেমতাে ভাবে, নিজের ইচ্ছেমতাে চলে। হারিয়ে যায় সীমানা ছাড়িয়ে।

উদ্দীপকে এমন একটি অদ্ভুত দেশের কল্পনা করা হয়েছে যেটি আমাদের বাস্তব জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানে মণ্ডা-মিঠাই তেতাে লাগে, কিন্তু ওষুধ খেতে ভালাে লাগে। আবার অন্ধকার জিনিসকে সাদা দেখায়, সাদা জিনিসকে কালাে দেখায়। নতুন দেশ’ কবিতায়ও কিশাের মনে অজানা এক দেশের কল্পনা দেখা গেছে। কিশােরটি কল্পনা করে নদীতে নৌকা ভেসে গিয়ে অন্য কোনাে দেশে হয়তােবা গিয়ে ভিড়ে। হয়তাে দূরে অন্য কোনাে বন আছে, যেখানে নতুন নতুন ফুল আছে, তার নিচ দিয়ে ঘুরে বেড়ায় নতুন ধরনের অনেক পশু। এভাবেই দূরে নতুন কোনাে দেশের। কথা কল্পনা করা হয়েছে কবিতায়। এদিক থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের সঙ্গে নতুন দেশ’ কবিতার অন্য জগতের কল্পনা করার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকটি নতুন দেশ’ কবিতার কিশােরের সামগ্রিক চিন্তার প্রতিফলন নয়।

কিশোর মন কৌতূহলী ও কল্পনাপ্রবণ হয়। তারা মনের অজান্তেই কল্পনা করে নেয় অনেক কিছু। তাদের এই কল্পনা সবসময় যে যৌক্তিকতা পায়, তা নয়। কিন্তু তারা এই কল্পনায় হারিয়ে যেতে পছন্দ করে।

উদ্দীপকে বাস্তবতা থেকে বিপরীতধর্মী একটি জগতের কথা কল্পনা করা হয়েছে। সেখানে সবকিছুই বাস্তব জগতের চেয়ে আলাদা। সেখানে বাস্তব জগতের সাথে মিলে কোনােকিছুই হয় না। নতুন দেশ’ কবিতায় কিশাের মন দূরের কোনাে জগতের কথা কল্পনা করেছে। তার কাছে মনে হয়েছে দূরে। অন্য কোনাে জগৎ আছে, সেখানে হয়তাে নারিকেলের বনগুলাে সারে সারে দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে নতুন ফুল, নতুন রকমের পশু রয়েছে। কিশােরের মন সেখানকার নতুন বনে যেতে চায়, সেখানকার মানুষ সম্পর্কে জানতে চায়।

উদ্দীপকে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী এবং অদ্ভুত একটি দেশের কল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন দেশ’ কবিতায় দূরের অন্য কোনাে এক জগতের কথা কল্পনা করা হয়েছে, যা বাস্তব জগতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক অধিক ভাবাবেগ সমৃদ্ধ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি নতুন দেশ’ কবিতার কিশােরের চিন্তার প্রতিফলন নয়। উদ্দীপকের বিষয় :ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন দেশকে চেনা।

প্রশ্ন ৪| নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলাের উত্তর দাও :

পৃথিবীর অন্য কোনাে নগর দেখতে পৃথিবীর এত দেশের এত ট্যুরিস্ট আসে না। পারী দেখতে প্রতি বৎসর যে কয় লক্ষ বিদেশি আসে, তাদের পনের আনা আমেরিকান ও ইংরেজ। আমেরিকানদের চোখে পারীই হচ্ছে ইউরােপের রাজধানী, আর ইউরােপের চোখে পারী হচ্ছে লন্ডন, ভিয়েনা, বার্লিন, মস্কোর চেয়েও আন্তর্জাতিক।

(তথ্যসূত্র : পারী— অন্নদাশঙ্কর রায়)

ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা কত সনে মৃত্যুবরণ করেন?

খ. কবিতার ছেলেটির মনে নতুন দেশে যাওয়ার সাধ জাগে কেন? বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকের বক্তব্য নতুন দেশ’ কবিতার যে বিশেষ দিকটিকে আলােকপাত করেছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকে ভ্রমণের দিকটি প্রতিফলিত হলেও নতুন দেশ কবিতার মূলভাব অনুপস্থিত”- যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১৩৪৮ সনে মৃত্যুবরণ করেন।

খ। কবিতার ছেলেটি অজানাকে জানতে চায় বলেই তার মনে নতুন দেশে যাওয়ার সাধ জাগে।

কবিতার ছেলেটি নিজের ঘরের কোণে থাকে। বাবা অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে বলে তার অন্য কোনাে জায়গায় যাওয়া হয় না। কিন্তু সে অজানাকে জানতে চায়। মাঝনদীতে নৌকা চলতে দেখে তারও ভেসে যেতে ইচ্ছে করে। সে জানতে চায় অজানা দেশের মানুষ সম্পর্কে, তাদের পরিবেশ সম্পর্কে। এ কারণেই ছেলেটির মনে নতুন দেশে যাওয়ার সাধ জাগে।

গ। উদ্দীপকের বক্তব্য ‘নতুন দেশ’ কবিতার ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন দেশকে চেনার দিকটিকে আলােকপাত করেছে।

এক জায়গায় আবদ্ধ থাকা মানুষের মন অজানার টানে ছুটে যেতে চায়। এজন্য মানুষের মনে নতুন জায়গায় ভ্রমণের ইচ্ছা জাগে। ভ্রমণের মধ্য দিয়ে অজানাকে জেনে মানুষ তার মনের কৌতূহল মেটাতে চায়।

‘নতুন দেশ’ কবিতার কিশােরের মধ্যে নতুন দেশকে জানার কৌতূহলের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। অজানাকে জানার এক অদম্য ইচ্ছা তার মধ্যে বিদ্যমান। মাঝনদী দিয়ে বয়ে যাওয়া নৌকার দিকে তাকিয়ে তার নতুন দেশ ভ্রমণের সাধ জাগে। সেখানকার মানুষ, প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার জন্য সে অজানা দেশে ভ্রমণ করতে চায়।

উদ্দীপকের বক্তব্যেও ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন দেশকে চেনার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। পারীর অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পৃথিবীর সব দেশের মানুষ সেখানে ভিড় করে। ট্যুরিস্টদের ভ্রমণের মাধ্যমে অজানাকে জানার বিষয়টি উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের বক্তব্য নতুন দেশ” কবিতার ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন দেশকে চেনার দিকটিকে আলােকপাত করে।

ঘ। “উদ্দীপকে ভ্রমণের দিকটি প্রতিফলিত হলেও নতুন দেশ কবিতার মূলভাব অনুপস্থিত”- মন্তব্যটি যথার্থ।

পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে থাকা অজানা রহস্যকে মানুষ জানতে চায়। উন্মােচন করতে চায় এসব রহস্য। এক্ষেত্রে শিশু-কিশােরদের কৌতূহল থাকে সবচেয়ে বেশি।

‘নতুন দেশ’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিশােরের অজানা রহস্য জানার সীমাহীন কৌতূহলের কথা বলেছেন। কিশাের মন প্রকৃতির অপার রহস্য উন্মােচন করতে চায়। ভাটার টানে ঘাটে বাঁধা নৌকা মাঝনদী পেরিয়ে কোন অজানা দেশে গিয়ে পৌছাবে তা জানতে চায় সে। কবিতাটিতে আরও প্রকাশ পেয়েছে কিশােরের কল্পনাপ্রবণ মন। তার কল্পনার জগতে বিচরণ করে সে, চলে যায় অজানা কোনাে দেশে। অন্য দেশে ভ্রমণ করে সে জানতে চায়, সেই অজানা দেশ, সেই দেশের মানুষ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। উদ্দীপকে ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন দেশকে চেনার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ পারীর অপার সৌন্দর্যের রহস্যে বিমােহিত হয়ে ভ্রমণে আসে।

উদ্দীপকে ভ্রমণের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। অজানাকে জানার অদম্য আকাক্ষা থেকেই মানুষের মনে ভ্রমণের ইচ্ছা জাগ্রত হয়। যেমনটি নতুন দেশ’ কবিতার কিশােরের মনের ইচ্ছায় প্রকাশ পেয়েছে। কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদীর সৌন্দর্য ও অজানাকে জানার কৌতূহল ও আগ্রহের কথা, যা উদ্দীপকের বক্তব্যে অনুপস্থিত। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।

Leave a Comment