নেকলেস গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

নেকলেস গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। নেকলেস গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের জন্য। আজকের আর্টিকেলে নেকলেস গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

নেকলেস গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. অতিরিক্ত পরিশ্রম মাদাম লোইসেলের শরীরে কেমন প্রভাব ফেলে?
উত্তর: অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে মাদাম লোইসেলকে বয়স্কা মনে মাদাম লোইসেল গরিব গৃহস্থ ঘরের শক্ত, কর্মঠ ও অমার্জিত মেয়ের মতো হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চুল অবিন্যস্ত ও ঘাগরা একপাশে মোচড়ানো থাকত। দশ বছর পর মাদাম ফোরসটিয়ারের সঙ্গে তাঁর দেখা হলে ফোরসটিয়ার তাঁকে চিনতেই পারেননি।

প্রশ্ন-৩. মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মি. লোইসেলের কাছে মণিমুক্তা বা দামি পাথর কিনে দেওয়ার অর্থ ‘ছিল না বলে তিনি মাদাম লোইসেলকে ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন। মি. লোইসেল ছিলেন শিক্ষাপরিষদ অফিসের সামান্য কেরানি। তাঁর পক্ষে মাদাম লোইসেলকে দামি অলংকার কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই বল নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্যে মাদাম লোইসেলকে তিনি ফুল দিয়ে সাজতে বলেছিলেন।

প্রশ্ন-২. মাদাম লোইসেল দুর্দশার জন্যে ফোরসটিয়ারকে দায়ী করলেন কেন?
উত্তর: ফোরসটিয়ারের কাছ থেকে ধার নেওয়া হারটি হারিয়েই মাদাম লোইসেল দুর্দশায় পড়েন। তাই তিনি ফোরসটিয়ারকে দুর্দশার জন্যে দায়ী করেছিলেন। মাদাম লোইসেল বল নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্যে ফোরসটিয়ারের কাছ থেকে একটি হীরার হার ধার নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি হারটি হারিয়ে ফেলেন। হারটির মূল্য পরিশোধ করতে তিনি দাসীকে বিদায় করে দিয়েছিলেন এবং বাসা পরিবর্তন করে নিচু ছাদের কামরা ভাড়া নিয়েছিলেন ।

প্রশ্ন-৪, মাদাম লোইসেলের সৃষ্টি কী জন্যে হয়েছে বলে তিনি মনে করতেন?
উত্তর: মাদাম লোইসেলের ধারণা, বিলাসী জীবনযাপন ও মণিমুক্তার আতিশয্যের জন্যেই তাঁর জন্ম হয়েছিল। সাধারণ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। অলংকারের প্রতি তাঁর মোহ ছিল। কিন্তু তাঁর কাছে দামি ফ্রক বা জড়োয়া গহনা বলতে কিছুই ছিল না। অথচ ওই সবই ছিল তাঁর প্রিয় বস্তু। তিনি কল্পনায় ওইগুলোর ছক-ই আঁকতেন।

আরও পড়ুনঃ ঐকতান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-৫. লোইসেল দম্পতি নদীর দিকে হাঁটছিলেন কেন?
উত্তর: বাড়ি যাওয়ার গাড়ি না পেয়ে লোইসেল দম্পতি নদীর দিকে হাঁটছিলেন। অনুষ্ঠান শেষ করে রাস্তায় পৌঁছে তাঁরা কোনো গাড়ি পেলেন না। রাস্তায় অনেক দূর খোঁজ করেও কোনো সুফল হয়নি। এ কারণেই হতাশ হয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাঁরা সিন নদীর দিকে হাঁটতে থাকেন।

প্রশ্ন-৬. মি. লোইসেলের মুখ ম্লান হয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর: পোশাক কেনার জন্যে মাদাম লোইসেল চারশত ফ্রাঁ চাওয়ায় মি. লোইসেলের মুখ ম্লান হয়ে গিয়েছিল। বল নাচে যোগ দেওয়ার জন্যে মাদাম লোইসেল নতুন পোশাক কিনতে চেয়েছিলেন। মি. লোইসেল কিছু ফ্রা সঞ্চয় করেছিলেন বন্দুক কেনার জন্যে। মাদাম লোইসেলের পোশাক কিনলে তাঁর বন্দুক কেনা হবে না। এ কারণে মি. লোইসেলের মুখ ম্লান হয়ে গিয়েছিল।

প্রশ্ন-৭. প্যালেস রয়েলে হারটি মি. লোইসেল চুক্তিতে কেনেন কেন?
উত্তর: হারানো হারটি ফেরত পেলে ক্রয়কৃত হারটি ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে মি. লোইসেল চুক্তিতে হারটি কেনেন। প্যালেস রয়েল থেকে কেনা হারটির দাম ছিল ছত্রিশ হাজার ফ্রাঁ। বাবার মৃত্যুর পর প্রাপ্ত আঠারো হাজার ফ্রাঁ আর বাকি টাকা ধার করে মি. লোইসেল হারটি কেনেন। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে হারানো হারটি পেলে ক্রয়কৃত হারটি ফেরত দিয়ে তাঁরা চৌত্রিশ হাজার ফ্রাঁ ফেরত পেতে পারতেন।

প্রশ্ন-৮. হীরার হারটি ধার পেয়ে মাদাম লোইসেল কেমন আবেগ দেখালেন?
উত্তর: হীরার হারটি ধার পেয়ে মাদাম লোইসেল সবেগে তাঁর বান্ধবীর গলা জড়িয়ে ধরলেন। পরম আবেগে তাঁকে বুকে চেপে ধরেন। মাদাম লোইসেলের অলংকারের প্রতি মোহ ছিল। অর্থ সংকটের কারণে তিনি তাঁর আশা পূর্ণ করতে পারছিলেন না। পরম আরাধ্য বস্তুকে হাতে পেয়ে তিনি তাঁর সবটুকু আবেগকে যেন প্রকাশ করেছিলেন।

প্রশ্ন-৯. মি. লোইসেলের নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মাদাম লোইসেলকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে মি. লোইসেল নির্বাক ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। মাদাম লোইসেল থিয়েটার দেখতে যাওয়ার জন্যে একটা পোশাক ব্যবহার করতেন। বল নাচের অনুষ্ঠানে মাদাম লোইসেলকে মি, লোইসেল ওই পোশাক পরে যেতে বলেছিলেন। এতে মাদাম লোইসেলের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে।

প্রশ্ন-১০. মাদাম লোইসেল অসুখী ছিলেন কেন?
উত্তর: মাদাম লোইসেলের কল্পনার জগৎ এবং বাস্তবতার জগৎ ভিন্ন ছিল বলে তিনি অসুখী ছিলেন। মাদাম লোইসেলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাকে অসুখী করে তুলেছিল। তিনি তার ধনী বান্ধবীর সাথে নিজের তুলনা করতেন। ধনী বান্ধবীর সঙ্গে তিনি দেখা করতে চাইতেন না। তিনি নিজেকে গরিব মনে করতেন। অথচ তাঁর কল্পনার রাজ্যটি ছিল বিশাল।

প্রশ্ন-১১. মাদাম লোইসেলের কল্পনার রাজ্যটি কেমন ছিল?
উত্তর: মাদাম লোইসেলের কল্পনার রাজ্যটি ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। তিনি কল্পনা করতেন তাঁর বৈঠকখানায় থাকবে রেশমি পর্দা, আসবাবপত্রগুলো থাকবে চমৎকার চিত্রশোভিত। ঘরে থাকবে। আরামকেদারা। সান্ধ্যভোজনে অপূর্ব খাদ্য হিসেবে থাকবে গোলাপি রঙের রোহিত মাছ অথবা মুরগির পাখনা। বিকেলে বন্ধুদের সাথে গল্পগুজবের জন্যে থাকবে আলাদা একটি কক্ষ। মোটাসোটা দুজন ভৃত্য থাকবে তাঁর বাড়িতে।

প্রশ্ন-১২. হারটি ফেরত দেওয়ার পরে মাদাম লোইসেলের মনে কোন ধরনের ভাবনার উদ্রেক হয়েছিল? ব্যাখ্যা করো। উত্তর: হারটি ফেরত দেওয়ার পর মাদাম লোইসেলের মনে হয়েছিল। তাঁর বান্ধবী যদি বুঝতে পারতেন হারটি বদলে দেওয়া হয়েছে। তাহলে তিনি তাঁকে অপহারক ভাবতে পারতেন। বান্ধবীর হার পরে বল নাচের আসরে গিয়ে মাদাম লোইসেল ফেরার পথে হারটি হারিয়ে ফেলেন। পরে তাঁদের সমস্ত জমানো টাকা দিয়ে ঠিক একই রকম দেখতে একটি হার কিনে তিনি বান্ধবীর কাছে ফেরত দিতে যান। মানুষ অপরাধ করলে সর্বদা তার মনে হয় যে তার অপরাধ সবাই বুঝতে পারবে। তেমনি মাদাম লোইসেলের মনেও ভয় কাজ করছিল, তাঁর বান্ধবী হারের বাক্সটি খুলে যদি দেখেন যে, হারটি বদলে দেওয়া হয়েছে তখন তিনি মাদাম লোইসেলকে খারাপ ভাববেন। হারটি ফেরত দেওয়ার পর ভয়ে লোইসেলের মনে এ ভাবনার উদ্রেক হয়েছিল।

প্রশ্ন-১৩. হারটি দেখে মাদাম লোইসেলের অনুভূতি কেমন হয়েছিল?
উত্তর: হারটি দেখে মাদাম লোইসেল আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েন। বল নাচের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্যে বান্ধবীর কাছে গহনা চাইতে যান মাদাম লোইসেল। বান্ধবী ফোরসটিয়ার তাঁকে ‘মণিমুক্তাখচিত চমৎকার কারুকার্য করা অনেক গহনা দেখান । হঠাৎ কালো স্যাটিনের বাক্সে অপরূপ হীরার হারটি দেখে মাদাম লোইসেলের বুক দুরু দুরু করে অদম্য কামনায়। এই হারটি দেখার পর এত পছন্দ হয় যে, মাদাম লোইসেল তাঁর বান্ধবীর কাছে অন্য গহনাগুলো বাদ দিয়ে এটিই নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এটা গলায় দিয়ে তিনি অত্যন্ত আনন্দ বোধ করেন।

প্রশ্ন-১৪. লোইসেল কেন মাতিলদাকে চারশত ফ্রাঁ দিতে চান?
উত্তর: একটা ভালো পোশাক কিনতে লোইসেল মাতিলদাকে চারশত ফ্রাঁ দিতে চান । মাদাম লোইসেলের ভালো পোশাক ছিল না। এ কারণে তিনি কিছুতেই অনুষ্ঠানে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। লোইসেল তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে নিজের বন্দুক কেনার জন্যে জমানো অর্থ থেকে তাঁকে চারশত ফ্রাঁ দিতে রাজি হন। মূলত মন রক্ষার্থে ভালো পোশাক ক্রয়ের জন্যে লোইসেল মাতিলদাকে স্ত্রীর চারশত ফ্রাঁ দিতে চান ।

প্রশ্ন-১৫. ‘সর্বদা তার মনে দুঃখ’- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘সর্বদা তার মনে ‘দুঃখ’- উক্তিটি দ্বারা মাদাম লোইসেলের অন্তর্বেদনাকে বোঝানো হয়েছে। মাদাম লোইসেল মনে করেন যত সব রুচিপূর্ণ ও বিলাসিতার বস্তু আছে, সেগুলোর জন্যেই তাঁর জন্ম। ঘরের দারিদ্র্য, হতশ্রী দেয়াল, জীর্ণ চেয়ার এবং বিবর্ণ জিনিসপত্রের জন্যে তিনি সর্বদা ব্যথিত হতেন। যদিও তাঁর সমবয়সি অন্য কোনো মেয়ে এসব খেয়াল করত না, তিনি এতে দুঃখিত ও ক্রুদ্ধ হতেন। উক্তিটি দ্বারা মাদাম লোইসেলের মনের এ অবস্থাকেই বোঝানো হয়েছে।

প্রশ্ন-১৬. মাতিলদা কেরানির সাথে বিয়ে মেনে নিয়েছিলেন কেন?
উত্তর: দরিদ্রতার কারণে মাতিলদা কেরানির সাথে বিয়ে মেনে নিয়েছিলেন। নিয়তির ভুলে এক কেরানি পরিবারে জন্ম হয়েছিল মাতিলদার। আনন্দ কিংবা আশা কোনোটাই তাঁর জীবনে ছিল না। নিজেকে উচ্চবিত্ত মহলে পরিচিত করার, প্রশংসা পাওয়ার কোনো উপায় তাঁর ছিল না। এ কারণেই ধনী অথবা বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে প্রেমলাভ কিংবা বিবাহিত হওয়ার সুযোগও তাঁর ছিল না। তাই শিক্ষাপরিষদ অফিসের সামান্য এক কেরানির সঙ্গে বিবাহকে তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন।

নেকলেস গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। কেউ কিছু বুঝতে না পারলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

About admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *