রক্তে আমার অনাদি অস্থি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

রক্তে আমার অনাদি অস্থি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। রক্তে আমার অনাদি অস্থি কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের জন্য। আজকের আর্টিকেলে রক্তে আমার অনাদি অস্থি কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

রক্তে আমার অনাদি অস্থি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন

প্রশ্ন-১. ‘গণমানবের তুলি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: ‘গণমানবের তুলি’ বলতে শিল্পী জনতার তুলিকে বুঝিয়েছেন। ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি গণমানবের শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচয় জ্ঞাপন করেছেন। কারণ কবি বাংলাদেশের প্রবহমান নদীগুলোর রূপবৈচিত্র্য অবলোকন করেছেন। নদীর যে বিচিত্র খেলা, নদীপাড়ের মানুষের জীবনের রঙের ছবি তিনি তাঁর কল্পনার রঙে আঁকেন। সাধারণ মানুষের বিচিত্র জীবনের ছবি আঁকেন বলে কবি নিজেকে গণমানবের শিল্পী মনে করেন।

প্রশ্ন-২. কবি বঙ্গোপসাগরের কাছে তাঁর প্রাণের স্বপ্নকে রেখেছেন কীভাবে?

উত্তর: বঙ্গোপসাগরের বিশালতার সঙ্গে ঐক্যসূত্র অনুভব করে কবি বঙ্গোপসাগরের কাছে তাঁর প্রাণের স্বপ্নকে রেখেছেন। সাগর যেমন বিশাল, কবির স্বপ্নও তেমন বিশাল। সে স্বপ্ন হলো নিজের অস্তিত্ব ও বাঙালি জাতিসত্তাকে বিদেশি আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করার স্বপ্ন। কবি চান দেশ তথা জাতি এ স্বপ্নকে ধারণ করুক। বিদেশিরা বুঝতে পারুক বঙ্গোপসাগর যেমন বিশাল, বাঙালি জাতির স্বপ্নও তেমন বিশাল।

প্রশ্ন-৩, ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় সুরমা নদীর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে কেন?

উত্তর: ভূমির উর্বরতায় সুরমা নদীর অসামান্য অবদানের কারণে ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় সুরমা নদীর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। নদীর পানিতে যে পলি বাহিত হয় তা অত্যন্ত মূল্যবান। কেননা এই পলি ভূমির উর্বরতা বাড়ায়। এই উর্বর মাটিতে সোনার ফসল ফলে। তাই কবি সুরমা নদীতে মিশ্রিত পলিমাটিকে গলিত সোনার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সুরমা নদীর এ অবদানের কারণেই কবিতায় সুরমা নদীর প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে।

প্রশ্ন-৪. জীবনরূপ নদীর নিরন্তর বয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: বিশাল শক্তির উৎস বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশে নিজেকে আরও শক্তিশালী করতে জীবনরূপ নদী নিরন্তর বয়ে যাচ্ছে। নদীমাতৃক দেশ ও বাংলাদেশ অনাবিল আনন্দের সাথে বয়ে যাওয়াই নদীর ধর্ম। এভাবে নদী, বয়ে যেতে যেতে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিশে এক ব্যাপক শক্তিতে পরিণত হয়। এখানে মূলত নদীর নিরন্তর পথচলা দ্বারা বাঙালি জাতির স্বাধীনচেতা সংগ্রামী মনোভাবকেই বোঝানো হয়েছে। সমস্ত নদী যেমন বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়ে অসম শক্তিরূপে প্রকাশিত হয় অনুরূপভাবে বাঙালির সংগ্রামী চেতনায় সকল বিদেশি শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ রক্তে আমার অনাদি অস্থি কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-৫. ‘পদ্মা তোমার যৌবন চাই’— পক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ‘পদ্মা তোমার যৌবন চাই’— পক্তিটি দ্বারা কবি পদ্মার চির প্রবহমানতা কামনা করেছেন। কবি দিলওয়ার তাঁর কবিতায় সাগরদুহিতা ও নদীমাতৃক বাংলাদেশের বন্দনা করেছেন । পদ্মা অনন্ত যৌবনা। এই নদীর প্রবহমানতা কবির আরাধ্য। পদ্মা তার চলার পথে সকল বাধা অনায়াসে অতিক্রম করে। এ কারণেই কবি পদ্মার যৌবন প্রার্থনা করেছেন।

প্রশ্ন-৬. ‘ভয়াল ঘূর্ণি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: ‘ভয়াল ঘূর্ণি’ বলতে কবি প্রতীকী অর্থে বাঙালি জাতির সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার শক্তিকে বুঝিয়েছেন। বাঙালি চিরকালই সংগ্রামী জাতি হিসেবে পরিচিত। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম, ছয় দফা ইত্যাদি বিভিন্ন আন্দোলনে বাঙালিরা দেখিয়েছে তাদের জাতীয় চেতনা, সংগ্রামী মনোভাব, জয়ের মূলমন্ত্র। নদীর পানি যেমন একীভূত হয়ে ভয়াল ধ্বংসাত্মক রূপ তৈরি করে থাকে তেমনি বাঙালির সংগ্রামী মনোভাব সমস্ত অপশক্তিকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে। ভয়াল ঘূর্ণি বলতে কবি প্রতীকী অর্থে বাঙালির চিরন্তন সংগ্রামের দিকটিকেই বুঝিয়েছেন।

প্রশ্ন-৭. কীভাবে কবি তাঁর ক্রোধকে শক্তিমান করেছেন? বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: সমুদ্রের বিশাল ঘূর্ণমান জলরাশি দেখে কবি তাঁর ক্রোধকে শক্তিমান করেছেন। করে কবি বিদেশি নরদানবের আগ্রাসন দেখে ক্ষুব্ধ। তিনি চান বাঙালি জাতি যেন তাদের নিজস্ব অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে। কিন্তু মানুষরূপী নরপশুরা অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন বাঙালিদের অধিকারবঞ্চিত করতে চায়। তা দেখে কবি ক্ষুব্ধ। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি যেমন সবকিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়, কবিও চান বিপক্ষ লি শক্তিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে। তাই কবি সমুদ্রের ঘূর্ণমান ভয়াল জলরাশির মতো তাঁর ক্রোধকে শক্তিমান করেছেন।

প্রশ্ন-৮. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় দেশের প্রতি কবির যে মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতার মূলভাবে দেশের প্রতি কবির মমত্ববোধ ফুটে উঠেছে। কবি বাংলার মাটি, নদী প্রকৃতিকে দেখে গভীরভাবে এর সৌন্দর্য .অনুভব করেছেন। তিনি বিভেদমুক্ত কল্যাণী পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। বাঙালিকে যারা পরাধীন করে রাখতে চায়, কবি তাদের প্রতি প্রচণ্ড কুদ্ধ। তিনি চান বাঙালিরা যেন তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। কবি দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসেন। তাঁদের প্রতি কবি আস্থাবান ।

প্রশ্ন-৯. ‘বহমান জীবন এখানে বাধাহীন নয়’ কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: বহমান জীবনে যে নানা বাধা-বিঘ্ন থাকে, আলোচ্য কথাটি দ্বারা সে বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। নদী তার চলার পথে নানা জায়গায় বাধা পায়, আবার এগিয়ে চলে। অনুরূপভাবে বাঙালি জাতির জীবনও তেমনি বহমান। শত বাধা পেলেও বাঙালির চেতনা এক বিন্দু পরিমাণও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় না। আলোচ্য কথাটি দ্বারা বাঙালির এমন সংগ্রামমুখর বহমান জীবনকেই বোঝানো হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ সেই অস্ত্র কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১০. রক্তে আমার অনাদি অস্থি বিদেশে জানে না কেউ! উদ্ধৃত চরণগুলো দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: কবি তাঁর স্বদেশের নদীগুলো দ্বারা নিজের জাতির অস্তিত্বের যে সত্তা প্রকাশ করেছেন, তা আলোচ্য চরণগুলো দ্বারা রূপায়িত করেছেন। – কবি পরদেশী শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে একত্র করতে চেয়েছেন যেন তাদের মিলিত শক্তিতে শত্রুকে ঘায়েল করা যায়। এ কারণে বিদেশি নরদানবের আগ্রাসন এ জনগোষ্ঠীকে দমাতে পারে না। বিদেশিরা হয়তো জানে না যে, আবহমান ছুটে চলা নদীর মতোই কবি নিজের অস্তিত্বকে ধারণ করে আছেন, যা ওই জাতিসত্তার শোণিত ও অস্থি।

প্রশ্ন-১১. কবি নিজেকে গণমানবের শিল্পী হিসেবে কীভাবে উপস্থাপন করেছেন?

উত্তর: কবি তাঁর চেতনা ও সৃষ্টিতে নিজেকে গণমানবের শিল্পী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি গণমানবের শিল্পী হিসেবে নিজের প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। কারণ তিনি তাঁর দেশ ও দেশের মানুষকে অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসেন। এই বাংলার সাধারণ মানুষের যে নিরন্তর জীবনপ্রবাহ, তাকেই কবি তাঁর চেতনা ও সাহিত্যকর্মের মূল উপজীব্য করেছেন। এভাবেই সহৃদয় আন্তরিকতায় কবি নিজেকে গণমানবের শিল্পী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

প্রশ্ন-১২. বাংলার মাটিতে কীভাবে গলিত সোনা মিশে আছে?

উত্তর: বাংলার মাটিতে পলিরূপে গলিত সোনা মিশে আছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক কৃষিপ্রধান দেশ। বর্ষাকালে কিংবা বন্যার সময় এদেশের ফসলি জমিতে যোগ হয় সোনারঙা পলিমাটি। কবি সে পলিমাটিকেই সোনা মেশানো বলেছেন, কারণ এ মাটিতেই ফলে সোনার ফসল। যে মাটি খাঁটি সোনার মতোই মূল্যবান। তাই বলা যায় পলিরূপে বাংলার মাটিতে গলিত সোনা মিশে আছে।

প্রশ্ন-১৩. দিলওয়ারকে গণমানুষের কবি বলা হয়েছে কেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : দিলওয়ারের কবিতায় গণমানুষের স্বপ্ন ও সম্ভাবনা চিত্তাকর্ষকভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলেই তাঁকে গণমানুষের কবি বলা হয়েছে। দিলওয়ারের কবিতার মূলসুর দেশ, মাটি ও মানুষ; তিনি বিভেদমুক্ত এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। তাঁর কবিতায় তিনি পৃথিবীকে স্বাপ্নিক করেছেন গণমানুষের মুক্তিকে লক্ষ্য করে। এ কারণে তাঁকে গণমানুষের কবি বলা হয়েছে।

প্রশ্ন-১৪. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি কীভাবে মানুষের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবি মানুষের সম্ভাবনা ও ভালোবাসাকে প্রত্যক্ষ করেই তার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। কবি. এদেশে বিচিত্র মানুষের সমাগমকে লক্ষ করেছেন এবং দেখেছেন তাদের নানামুখী কর্মতৎপরতা। মানুষের বিচিত্র জীবনের মধ্যে তিনি অমিত সম্ভাবনাকে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে প্রত্যক্ষ করেছেন। এ কারণেই কবি মানুষের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন-১৫. কবি তাঁর প্রাণ-স্বপ্নকে কীভাবে কবিতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : কবি নিজের অস্তিত্বকে জাতিসত্তার অস্থির মধ্যে ধারণ করেই তাঁর প্রাণ-স্বপ্নকে কবিতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কবি এ কবিতায় প্রকৃতির অনন্য রূপকতায় মানুষের যশস্বীতাকে লক্ষ করেছেন। এদেশের প্রকৃতির অস্তিত্বেই মানুষের অস্তিত্ব জড়িত। আর এই পরম্পরা আবহমানকাল ধরেই চলে আসছে। তাই কবিও নিজের ব অস্তিত্বকে জাতিসত্তার অস্থির মধ্যে ধারণ করেছেন এবং তাঁর প্রাণ- স্বপ্নকে কবিতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

প্রশ্ন-১৬. ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর : জাতিসত্তার শোণিত এবং অস্থি কবি নিজের অস্তিত্বে ধারণ করে আছেন, এখানে সেকথাই আলংকারিক ভাষায় ব্যক্ত হয়েছে। ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতায় কবিকে দেখা যায় দেশ ও ব্রণ মাটির কবি হিসেবে। কিন্তু তিনি মনে করেন, শুধু দেশপ্রেম নয়, তাঁর রক্তে প্রবহমান রয়েছে জাতিসত্তার শোণিত অস্থি, যাকে’ রুখতে পারবে না কোনো বিদেশি আগ্রাসন আলোচ্য পঙ্ক্তিতে এ বিষয়টিই উঠে এসেছে।

রক্তে আমার অনাদি অস্থি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। কেউ কিছু বুঝতে না পারলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment