সাম্যবাদী কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। সাম্যবাদী কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের জন্য। আজকের আর্টিকেলে সাম্যবাদী কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
সাম্যবাদী কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১. সকল ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের মূলকথা বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: সকল ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের মূলকথা হচ্ছে সমতা ও মানবতাবোধ। পৃথিবীতে অনেক ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ রয়েছে। সব ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থে সাম্যের কথা বলা হয়েছে এবং মানবতার জয়গান গাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই— এ কথাই সকল ধর্মের মর্মবাণী।
প্রশ্ন-২. আরব-দুলাল কোরানের সাম-গান গেয়েছেন কেন?
উত্তর: মানুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার জন্যেই আরব-দুলাল পবিত্র কোরনের সাম-গান গেয়েছেন। পৃথিবীর সকল ধর্মেই মানুষের মধ্যে সমতার কথা বলা হয়েছে। কেননা এ পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে মহীয়ান আর কিছুই নেই। তাই কোনো মানুষকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। আর এ সাম্যকে অগ্রাধিকার দিতেই কোরানের সাম্যের কথা বলা হয়েছে, যা গেয়েছেন। আরব-দুলাল হজরত মুহম্মদ (স.)।
প্রশ্ন-৩. মানুষ কেন মৃত পুঁথিতে ঠাকুর-দেবতাকে খুঁজে ফেরে?
উত্তর: ঠাকুর-দেবতার বসবাস মানবহৃদয়ে, মানুষ এ সত্য বুঝতে পারে না বলে পুঁথিতে ঠাকুর-দেবতাকে খুঁজে ফেরে। মানুষের হৃদয়ের মাঝে দেবতার আসন। কিন্তু অনেকেই তা বুঝতে পারে না। ধর্মগ্রন্থে ঠাকুর-দেবতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। মূলত মানুষের হৃদয়েই স্রষ্টার বাস। তাই মানবমনকে জয় করতে পারলে ঠাকুর-দেবতাকে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন-৪, ‘তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার’- এখানে ‘তোমাতে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতারা এখানে ‘তোমাতে’ বলতে মানবহৃদয়কে বোঝানো হয়েছে। মানুষের হৃদয় জ্ঞানের অপার ভাণ্ডার। সকল ধর্ম, ধর্মের মূলমন্ত্র মানুষের হৃদয়ের মধ্যেই সংকলিত রয়েছে। আর মহাপুরুষগণ মানবহৃদয়ের সত্যতাকে ধারণ করেন এবং প্রচার করেন। তাই সকল ধর্ম, যুগাবতার মানুষের মধ্যেই রয়েছে।
প্রশ্ন-৫, ‘কে তুমি? — পার্সি?জৈন? ইহুদি? সাঁওতাল, ভীল, গারো?’ – পড়ক্তিটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘কে তুমি?– পার্সি? জৈন? ইহুদি? সাঁওতাল, ভীল, গারো? পড়ক্তিটি দ্বারা কবি পৃথিবীর সকল জাতির মাঝে বিদ্যমান অভিন্ন সত্তাকে বুঝিয়েছেন। পৃথিবীর নানা জাতি-ধর্ম-বর্ণ প্রভৃতি দিক থেকে নিজেদের আলাদা করার ক্ষেত্রে সদা সচেষ্ট, যা মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক কবি মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি তাদের উদ্দেশ্যে আলোচ্য প্রশ্নগুলো করেছেন। পৃথিবীর সকল মানুষ যে সমান এবং তাদের মাঝে যে কোনো বিভেদ থাকা উচিত নয়— এ বিষয়টিই কবি উদ্ধৃত পঙক্তিটির দ্বারা বুঝিয়েছেন।
প্রশ্ন-৬. ‘যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ মুসলিম-ক্রিশ্চান।’ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ মুসলিম-ক্রিশ্চান।’ উক্তিটি দ্বারা ধর্মীয় সাম্য তথা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বোঝানো হয়েছে। কবি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। তাঁর এই চেতনা তিনি মানবসমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান। এ কারণে তিনি সাম্প্রদায়িকতার দেয়াল ভেঙে মানুষকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ধর্ম-বর্ণ নয়, বরং সকল মানুষের পরিচয় হবে মানুষ। উদ্ধৃত পঙক্তি দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন-৭, ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি অন্তরধর্মের ওপর জোর দিয়েছেন কেন?
উত্তর: বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি অন্তরধর্মের ওপর জোর দিয়েছেন। পৃথিবী আজ নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষে বিভক্ত। এ বিভক্তির দেয়াল কবিকে পীড়া দিয়েছে। তিনি লক্ষ করেছেন, পৃথিবীর সকল ধর্মের মূল লক্ষ্য মানবতাবোধ ও সমতা বিধান, যা একমাত্র মানুষের অন্তরেই বিদ্যমান। তা ছাড়া মানবহৃদয়ই সকল ঐশ্বর্যের মূল এ কারণেই তিনি অন্তরধর্মের ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রশ্ন-৮. শাক্যমুনি সিংহাসন ত্যাগ করলেন কেন?
উত্তর: মানবের মহা-বেদনায় ডাক শুনে তাদের সহযোগিতা করার জন্য শাক্যমুনি সিংহাসন ত্যাগ করলেন। কোনো বিবেকবান মানুষই মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে স্থির থাকতে পারে না। মহামানব শাক্যমুনি সিংহাসনে থাকা অবস্থায়ও মানুষের দুঃখ বেদনা অনুভব করে পীড়িত হন। এসব অসহায় মানুষের মুক্তির পথ খোঁজার জন্যেই তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন।
প্রশ্ন-৯, ‘মসজিদ এই, মন্দির এই গির্জা এই হৃদয়’- পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়’— পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি মানুষের হৃদয়ই যে সকল ঐশ্বর্যের আধার— এ বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন। তীর্থস্থান যেমন পবিত্র, মানবহৃদয়ও তেমনি পবিত্র। মনুষ্যত্বের উদ্ভব ও বিকাশ হৃদয়েই সংঘটিত হয়। হৃদয় পরিপুষ্ট হলেই মনুষ্যত্বের ‘জাগরণ ঘটে। আলোচ্য পক্তিটির দ্বারা কবি এ বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন-১০. ‘কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত’ চৰ্চাকে কবি পণ্ডশ্রম হিসেবে দেখেছেন কেন?
উত্তর: ধর্মগ্রন্থের পাঠক-অনুসারীরা সাধারণত সেসব গ্রন্থের মর্মবাণী অনুধাবনে ব্যর্থ হন বলে কবি এটাকে পণ্ডশ্রম হিসেবে দেখেছেন। শাস্ত্রের সুবচন মানবতার কথা বলে, মানুষের কল্যাণের কথা বলে। প্রত্যেক ধর্মের মানুষের পৃথক ধর্মগ্রন্থ থাকলেও প্রতিটি ধর্মগ্রন্থের মূলমন্ত্র হলো নৈতিক শিক্ষা ও সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রচার। কিন্তু ধর্মগ্রন্থের বেশির ভাগ পাঠক ও অনুসারী সেসব ধর্মগ্রন্থের মর্মবাণী অনুধাবন এবং তা অন্তরে ধারণ করতে ব্যর্থ হন। তাই কবি ‘কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত’ চর্চাকে পণ্ডশ্রম হিসেবে দেখেছেন।
প্রশ্ন-১১. কবি কেন নিজের প্রাণের মাঝে শাস্ত্রকে খুঁজতে বলেছেন?
উত্তর: সকল শাস্ত্রের সারকথা মানবহৃদয়ের মধ্যেই সংকলিত আছে, তাই কবি নিজের প্রাণের মাঝে শাস্ত্রকে খুঁজতে বলেছেন । পৃথিবীর নানা জাতির নানা ধর্মগ্রন্থ বা শাস্ত্র রয়েছে। সেসব শাস্ত্রের মর্মবাণী হলো মানবতাবোধ ও সমতার দৃষ্টিভঙ্গি। মানুষ যদি মানবিকতাবোধ ও সাম্যের চেতনায় ঋদ্ধ হয় তবে শাস্ত্রের এসব মর্মবাণী আপন হৃদয়েই উদ্ভাসিত হতে পারে। তাই কবি বিচিত্র ধর্মগ্রন্থ না ঘেঁটে বরং নিজের প্রাণের মাঝে শাস্ত্রকে খুঁজতে বলেছেন।
প্রশ্ন-১২. কাজী নজরুল ইসলামকে সাম্যের কবি বলা হয় কেন?
উত্তর: সাম্যের চেতনায় বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন বলে কাজী নজরুল ইসলাকে সাম্যের কবি বলা হয়। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্বের সমস্ত মানুষের মধ্যকার বৈষম্য দূর করতে সাম্যের জয়গান গেয়েছেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ইত্যাদি নানা পরিচয়ে মানুষের মাঝে বিদ্যমান বিভেদের দেয়ালগুলো ভেঙে দিতে তিনি লেখনী ধারণ করেছিলেন। মানুষে মানুষে সমতা সৃষ্টির মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনই ছিল তাঁর মূল অভিপ্রায়। তাই কাজী নজরুল ইসলামকে সাম্যের কবি বলা হয়।
প্রশ্ন-১৩. ‘সকল কালের জ্ঞান’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : ‘সকল কালের জ্ঞান’ বলতে কবি পৃথিবীর সব কালের সবসময়ের জ্ঞানের পরিধিকে বুঝিয়েছেন। পৃথিবীতে মানুষকে সত্য পথের দিশা দিতেই ধর্মের আবির্ভাব হয়েছে। তাই সকল ধর্মগ্রন্থ এমনকি জ্ঞানগ্রন্থ খুঁজলে সেখানে মানুষকেই পাওয়া যাবে। মানুষ সকল শাস্ত্র ব্যাখ্যা করে সত্যের পথকে উন্মোচিত করেছে। সত্যের পথ ও জ্ঞান পৃথিবীতে চিরকাল ঘূর্ণায়মান; তাই এ জ্ঞানের পরিধিকে কবি সকল কালের জ্ঞান বলেছেন।
প্রশ্ন-১৪, ‘বাঁশির কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা’— বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : উক্তিটি দ্বারা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক অর্জুনকে গীতায় উল্লেখিত জ্ঞানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনকে কর্মরহিত দেখে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে গীতাজ্ঞান প্রদান করেন। এই জ্ঞানে পৃথিবীর মানুষের জন্যে আচরণীয় সকল পথকে উন্মোচিত করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজাতেন বলেই কবি তাঁকে বাঁশির কিশোর বলেছেন।
সাম্যবাদী কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। কেউ কিছু বুঝতে না পারলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।