সেই অস্ত্র কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। আপনি কি সেই অস্ত্র কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর খুজতেছেন? আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের জন্য। আজকের আর্টিকেলে সেই অস্ত্র কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর শেয়ার করা হবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
সেই অস্ত্র কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন
প্রশ্ন-১.‘পাখিরা নীড়ে ঘুমোবে’— বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: পরিবেশ যদি শান্ত থাকে তাহলে পাখিরা নিজেদের নীড়ে ঘুমোবে। মানুষের সৃষ্ট কাজে বনের গাছপালা ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশও বিনষ্ট হচ্ছে। নিরূপদ্রব বাসস্থানের অভাব দেখা দিচ্ছে বন্য প্রাণীগুলোর। তাই মানুষের মধ্যে যদি ভালোবাসার সৃষ্টি হয় তাহলে মানুষের আচার-আচরণে পরিবর্তন আসবে, মানুষ ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং শান্তিময় পরিবেশে পাখিরা তাদের নীড়ে ঘুমাতে পারবে।
প্রশ্ন-২.‘যে অস্ত্র উত্তোলিত হলে পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র হবে আনত’— বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ভালোবাসা নামক অস্ত্রটি উত্তোলিত হলে পৃথিবীর ধ্বংসের জন্যে যে অস্ত্রগুলো সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলো ব্যবহারের পরিসমাপ্তি ঘটবে। প্রাচীনকালে মানুষ আত্মরক্ষার জন্যে অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছিল । কিন্তু এখন মানুষ ক্ষমতা আর আধিপত্য বিস্তারের জন্যেই অস্ত্রের ব্যবহার করে। এসব অস্ত্রের কারণে মানবজাতি ও পৃথিবী দুইই বিপন্ন। তাই ভালোবাসা নামক অস্ত্রটি আনার কথা বলা হয়েছে, তাহলে মানবজাতির কল্যাণ সাধিত হবে।
প্রশ্ন-৩.‘মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত লক্ষ লক্ষ মানুষকে করবে না পঙ্গু-বিকৃত’ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: হঠাৎ সৃষ্ট কোনো বিপদে মানুষকে কোনো পঙ্গুত্ব এবং বিকৃতির শিকার হতে হবে না, সেটাই বলা হয়েছে এখানে। পৃথিবীর মানুষের ক্ষমতার প্রতি লোভ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে। আর এসব মানবসৃষ্ট দুর্যোগে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতিই হয় বেশি। তাই যদি ভালোবাসা নামক অস্ত্রটি ব্যবহার করে এই বিকৃত মানসিকতা হতে মুক্তি পাওয়া যায়, তাহলে হঠাৎ কোনো দুর্যোগেরও সৃষ্টি হবে না এবং লক্ষ লক্ষ লোক হতাহতও হবে না। সমাজে শান্তিময় অবস্থা বিরাজ করবে।
প্রশ্ন-৪. ‘যে ঘৃণা বিদ্বেষ অহংকার এবং জাত্যভিমানকে করে বার বার পরাজিত’— চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: যে ঘৃণা বিদ্বেষ অহংকার এবং জাত্যভিমানকে বার বার পরাজিত করে— কথাটি দ্বারা ভালোবাসা নামক অস্ত্রটিকে বোঝানো হয়েছে। মানুষ অন্যকে ছোটো করার জন্যেই বৈষম্য সৃষ্টি করে। আর বৈষম্য কখনোই কোনো ভালো ফলাফল আনেনি। তাই আমাদের উন্নতির জন্যে মনের সমস্ত পঙ্কিলতা দূর করতে হবে। আর ভালোবাসা নামক অস্ত্রটিই ঘৃণা, বিদ্বেষ, অহংকার এবং জাত্যভিমানকে বার বার পরাজিত করে সেটিই এখানে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-৫. ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় বর্ণিত কবির সেই অস্ত্র উত্তোলিত হলে গৃহস্থালি খাঁ খাঁ করবে না কেন?
উত্তর: ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় বর্ণিত কবির সেই অস্ত্র উত্তোলিত হলে মানুষে মানুষে মমত্ব জাগ্রত হবে বলেই গৃহস্থালি খাঁ খাঁ করবে না। কবির সেই অস্ত্র হচ্ছে ভালোবাসার অস্ত্র। ভালোবাসার জয় সর্বত্র। ভালোবাসা থাকলে শোষকদের মনে মমতা জাগ্রত হবে। ফলে তারা গৃহস্থালি জোরপূর্বক শোষণ করা থেকে বিরত থাকবে। আর তা হলেই গৃহস্থালি কখনো খাঁ খাঁ করবে না।
প্রশ্ন-৬. ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি ভালোবাসা নামক অস্ত্রকে ফিরিয়ে দিতে বলেছেন কেন?
উত্তর: একমাত্র ভালোবাসই পৃথিবীকে সবুজ-সুন্দর করে গড়ে। তুলতে পারবে বলে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি ভালোবাসা নামক অস্ত্রকে ফিরিয়ে দিতে বলেছেন। কবির একমাত্র প্রত্যাশা ভালোবাসা নামক অস্ত্রকে পুনরায় মানবসমাজে ফিরিয়ে আনা। কবির কাছে ভালোবাসা কেবল আবেগ বা অনুভূতির দ্যোতনা নয়। তাঁর বিশ্বাস, এটি মানুষকে সকল অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণের পথ বাতলে দেয়। এ কারণেই তিনি বিশ্বের মানবকুলের কাছে এই ভালোবাসা নামক অস্ত্রকে ফিরিয়ে দিতে বলেছেন।
প্রশ্ন-৭. কবির যুদ্ধবিরোধী মন আন্দোলিত হয়েছিল কেন?
উত্তর: আণবিক বোমার আঘাতে মৃত কিংবা প্রজন্ম-পরম্পরায় পঙ্গুত্ব বরণকারী বহু মানুষের আর্তনাদে কবির যুদ্ধবিরোধী মন আন্দোলিত হয়েছিল। ভালোবাসাহীন বিদ্বেষপূর্ণ পৃথিবীতে যুদ্ধের অনিবার্য ক্ষতি সম্পর্কে কবি উৎকণ্ঠিত। কারণ তাঁর চৈতন্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার স্মৃতি জাগ্রত ছিল। যে নৃশংসতার মূলে ছিল আণবিক বোমার বিস্ফোরণ। এই বোমার আঘাতে অসংখ্য মানুষের আর্তনাদ কবিকে মর্মাহত করে। এ কারণেই তাঁর যুদ্ধবিরোধী মন আন্দোলিত হয়েছিল।
প্রশ্ন-৮. ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাটিকে শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর জন্যে এক চিরায়ত প্রার্থনাসংগীত বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: শান্তিপ্রিয় মানুষদের প্রত্যাশা ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় ফুটে ওঠায় কবিতাটিকে পৃথিবীবাসীর জন্যে এক চিরায়ত প্রার্থনাসংগীত বলা হয়েছে। প্রার্থনাসংগীতে মানুষ তার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পাওয়ার আকুল আবেদন জানায়। মানুষের এই কাঙ্ক্ষিত বস্তু হচ্ছে শান্তি। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাটিতে কবি ভালোবাসার অস্ত্রের প্রত্যাশা করেছেন। এই অস্ত্রের মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়নের কথা বলেছেন। এ কারণেই কবিতাটিকে শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর জন্যে এক চিরায়ত প্রার্থনাসংগীত বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-৯. ট্রয়নগরী বার বার বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মানুষের হিংসা আর দম্ভের শিকার হয়ে ট্রয়নগরী তথা মানবসভ্যতা বার বার বিধ্বস্ত হয়। প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন সুবিশাল নগরী ট্রয়। কিন্তু ভালোবাসাহীন মানুষের হিংসা-বিদ্বেষ আর দম্ভের শিকার হয়ে পতন ঘটে মানব ইতিহাসের সুন্দরতম এই নগরীর। ট্রয়নগরী বার বার বিধ্বস্ত হওয়া বলতে কবি বিভিন্ন সভ্যতার পতনের দিকটিকেই ইঙ্গিত করেছেন। মানুষের অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতায় পৃথিবীর অনেক সভ্যতাই কালক্রমে এভাবে হারিয়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃতাহারেই পড়ে মনে কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১০. ‘আধিপত্যের লোভ’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আধিপত্যের লোভ বলতে কবি মানুষের সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবকে বুঝিয়েছেন। পৃথিবী সবুজময় শান্তির বাগান হলেও মানুষের লোভ তাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তাই তারা অপরের কালসীমায় নিজের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এই প্রবণতা মানুষের আধিপত্যবাদ বা সাম্রাজ্যবাদী মনেরই পরিচায়ক।
প্রশ্ন-১১. আহসান হাবীবকে মানবদরদি শিল্পী বলা হয়েছে কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আহসান হাবীবের কবিতায় মানুষের নিত্যদিনের অনুভূতি অনুপুঙ্খভাবে রূপায়িত হয়েছে বলে তাঁকে মানবদরদি শিল্পী বলা হয়েছে। আহসান হাবীব মূলত স্বল্পপরিচিত ও প্রচারবিমুখ কবি হলেও তাঁর কবিতায় মানুষের উচ্চকিত অনুভূতি ব্যাপক গভীরতা পেয়েছে। মানুষের নিত্যজীবনকে তিনি কবিতার আকর হিসেবে বেছে নিয়েছেন । এ কারণে তাঁকে মানবদরদি শিল্পী বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-১২. ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কীভাবে কবির আশাবাদ প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কবি ভালোবাসার অস্ত্রে সবাইকে পরাভূত করবেন— ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় এভাবেই তাঁর আশাবাদ প্রকাশিত হয়েছে। পৃথিবীজুড়ে মানুষ যখন আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবে আবিষ্ট, তখন কবি মানুষের কাছে ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, একমাত্র ভালোবাসা দিয়েই পৃথিবীর সকল অশুভ শক্তিকে পরাভূত করা সম্ভব। আর এ ভালোবাসাই কবির আশাবাদরূপে এ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন-১৩. কবি ভালোবাসাকে ‘অমোঘ অনন্য অস্ত্র’ বলেছেন কেন?
উত্তর: ভালোবাসা মানুষের সকল অমঙ্গল থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দেয়। আমাদের পৃথিবী বিদ্বেষের বিষবাষ্পে ভরে গেছে। এই ‘পৃথিবীকে হিংসা, লোভ, ঈর্ষা থেকে মুক্ত করে সুন্দরের দিকে নিয়ে যেতে পারে শুধু ভালোবাসা। বিশ্বের মানবকুলের মঙ্গলে শুধু এই অস্ত্রই কার্যকরী বলে কবি ভালোবাসাকে ‘অমোঘ অনন্য অস্ত্র’ বলেছেন।
শেষ কথা
উপরে সেই অস্ত্র কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। কেউ কিছু বুঝতে না পারলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।