নাকের, রক্তের, মুখে, চোখের, বাচ্চাদের এলার্জি দূর করার উপায়

বর্তমান সময়ে আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন ধরণের এলার্জি হয়ে থাকে। আগেকার সময়ে মানুষ এলার্জি হলে কোনো সমাধান পেতো না। কিন্তু এখন এসময় এলার্জি দূর করার উপায় রয়েছে, যার ফলে আপনি সহজেই এলার্জি দূর করতে পারবেন।

নাকের এলার্জি দূর করার উপায়

অনেকেই নাকের এলার্জির সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এলার্জির কারণে সৃষ্ট সর্দি নাকের একটি সমস্যা যা নাসিকা ঝিল্লির প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় এ রোগী এলার্জিজদিত সর্দি ও হাচির কারনে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছেন। নিচে নাকের এলার্জির লক্ষণ ও নাকের এলার্জি প্রতিরোধ করার উপায় দেওয়া হলো:-

নাকের এলার্জির লক্ষণসমূহ

নাকের এলার্জির সমস্যার সৃষ্টি হলে কয়েকটি লক্ষণ রোগীর প্রকাশ পেয়ে থাকে। রোগী নাক চুলকানো থেকে শুরু করে, নাক দিয়ে পানি ঝরা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ও মাথা ব্যথার সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চোখ দিয়ে পানি পড়া সহ চোখ লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনেকদিন ধরে রোগীর যদি নাকের অ্যালার্জিতে সংক্রমিত থেকে থাকেন তাহলে নাকের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড ফুলে থলির মতো সৃষ্টি হতে পারে।

আরো পড়ুন:

নাকের এলার্জি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

নাকের এলার্জি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

নাকের এলার্জি হলে যে কারণে এলার্জির সৃষ্টি হয়েছে সেই সকল কারণগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যাদের নাকের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা শীতে ধুলাবালি ও কালো ধোয়া থেকে নিরাপদ থাকতে মাক্স ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া এই সময়ে নাক বন্ধ রোধ করার জন্য স্টেরয়েডজাতীয় নাকের স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। অবস্থা যদি খুবই গুরুতর হয়ে থাকে তাহলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

রক্তের এলার্জি দূর করার উপায়

রক্তে এলার্জির সমস্যাটা অনেকের হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এলার্জি টা এসে থাকে বংশগত কারণে। অর্থাৎ বিশেষ বস্তুতে যদি এলার্জি থেকে থাকে তাহলে সেই বস্তুর সংস্পর্শে আসলে শরীরে হিস্টামিন, সেরোটোনিন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়ে থাকে। যার কারণে সাধারণত অনেকের ত্বকে চাকা চুলকানি ও চোখ লালের মত সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া অনেকের রক্তে এলার্জি হওয়ার কারণে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের মত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। রক্তে এলার্জি হলে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে এই সমস্যাটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়:-

রক্তের এলার্জি দূর করার উপায়

➡️রক্তের এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি হলে যে খাবারগুলো খেলে এলার্জি হওয়ার পুনরায় সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।

➡️রক্তে এলার্জির সমস্যা থেকে থাকলে কখনোই অতিরিক্ত গরমে বেশিক্ষণ রৌদ্রে থাকা যাবে না।

➡️রক্তে এলার্জির সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত ঠান্ডা কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার খাওয়ার কারণে এলার্জি বাড়তে পারে।

➡️রক্তের এলার্জির সমস্যা থেকে থাকলে অতিরিক্ত রাত জাগা বন্ধ করতে হবে।অর্থাৎ সঠিক সময়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যেতে হবে। তাহলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকবে এবং শরীর নানা ধরনের চুলকানিগত সমস্যা থেকে দূরে থাকবে।

➡️নিয়মিত গরম পানি দিয়ে শরীর ধুতে হবে এবং সকল সময় চেষ্টা করতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য।

এই পদ্ধতি গুলো পালন করেও যদি এলার্জির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করে এটাকে দূরে রাখতে পারেন।

মুখে এলার্জি দূর করার উপায়

অনেকের মুখের ত্বকে এলার্জির সৃষ্টি হয়ে থাকে।এতে করে মুখের ত্বকে লাল লাল গোটা গোটা দাগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। যার কারণে অনেকের সৌন্দর্যে ভাটা পড়ে থাকে। মুখের এলার্জি দূর করার উপায় জানার আগে জেনে নিতে হবে মুখের এলার্জি কেন হয়।

মুখের এলার্জি কেন হয়

রোগীর যদি এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন খাবার খেলে মুখে এলার্জি হয়ে থাকে। তাছাড়া অতিরিক্ত রোদে থাকলে অনেকের ক্ষেত্রে মুখে এলার্জি হয়ে থাকে। মুখের এলার্জি প্রতিরোধ করার জন্য কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো:-

কালোজিরা খেতে পারেন মুখে ব্যবহার করতে পারেন

মুখের এলার্জিকে দূরে রাখতে কালোজিরা তেল মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে ও কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে। কেননা নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার মাধ্যমে ঠান্ডা জনিত এলার্জি থেকে শরীরকে দূরে রাখা সম্ভব।

আমলকি ও মধুর ব্যবহার করতে পারেন

প্রথমে আমলকি পাউডার করে নিতে হবে। তারপরে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমলকি পাউডারের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে হবে। যদি এলার্জি মুখে বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে তাহলে এই মিশ্রণটি মুখে মাখা যেতে পারে। এটা করলে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক ভালো হয়ে যাবে এবং শরীর থেকে এলার্জির সমস্যা দূর করা যাবে।

মুখে নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন

মুখে নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন

গরম পানির সাথে মুখে নিম পাতা ব্যবহার করলে মুখে এলার্জির সমস্যা থেকে খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। যদি কখনো মুখে এলার্জির কারণে গোটা গোটা দাগ সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে দেরি না করে গরম পানির সাথে নিম পাতা সিদ্ধ করে ব্যবহার করতে পারেন।

ঘি ব্যবহার করা যেতে পারে

ঠান্ডা জনিত এলার্জির সমস্যা থেকে যদি মুখে গোটা দাগ বা চুলকানির মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে ঘি হতে পারে দারুন একটি ঔষধি। এক্ষেত্রে রোগীকে বিশুদ্ধ ঘি সংগ্রহ করে এক চামচ ঘি খাবারের সঙ্গে খেতে পারেন। অথবা সরাসরি মুখে মাখতে পারেন তাহলে মুখের এলার্জির সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে।

চোখের এলার্জি দূর করার উপায়

চোখের এলার্জির কারণে অনেকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে থাকেন। অনেকের চোখ গোসল করার পর পরই লাল হয়ে যায়। এটা চোখের এলার্জির লক্ষণ হতে পারে। চোখের এলার্জিতে একজন ব্যক্তি তখনই আক্রান্ত হয়ে থাকে যখন ইমিউনিটি সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয়।

চোখের এলার্জি দূর করার জন্য কিছু টিপস ফলো করা যেতে পারে যার মাধ্যমে উপকার পাওয়া সম্ভব:-

➡️চোখের এলার্জি দূরে রাখতে গোলাপজল দারুণ কাজ করে থাকে। তাই এক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ফোটা গোলাপ জল এলার্জি আক্রান্ত চোখে দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে। তারপরে জলটা চোখের ভিতরে প্রবেশ করার পরই ইনফেকশন সারিয়ে তুলে থাকে।

➡️এক গ্লাস পানিতে দুই থেকে তিন চা চামচ লবণ দিয়ে ২০ মিনিট ফুটাতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে এক টুকরা পরিষ্কার তুলা দিয়ে চোখের কোণা ধীরে ধীরে মুছতে হবে। এর মাধ্যমে চোখের ময়লা দূর হয়ে আসবে এবং চুলকানির অস্বস্তি সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিবে।

➡️চোখের এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে হলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঠান্ডা পানি চোখের এলার্জির সমস্যা থেকে খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে মুক্তি দিতে সক্ষম। তাই চোখে চুলকানির মতো সমস্যা সৃষ্টি হলে বারবার চোখে পরিষ্কার পানি দিতে হবে।

এইভাবে যদি চোখের এলার্জির সমস্যা দূরে রাখা না যাই তাহলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে এবং খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

বাচ্চাদের এলার্জি দূর করার উপায়

বাচ্চাদের এলার্জি দূর করার উপায়

বাচ্চাদের এলার্জি সাধারণত খাবারের জিনিস থেকে হতে পারে। ছোটবেলায় অনেক বাচ্চাদের ঘন ঘন এলার্জির সমস্যা দেখা যায়। এরা সাধারণত পোকামাকড়ের এলার্জি থেকে প্রভাবিত হয়ে থাকে। এর ফলে বাচ্চাদের হাত ও পায়ের দিকে লাল গুটি দেখা যায়।

এই সমস্যাটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাছাড়া এমন অনেক বাচ্চা রয়েছে যারা পাঁচ বছর পর্যন্ত এই সমস্যাটায় ভুগতে দেখা যায়। তাই এই সময়টাতে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে বাচ্চাদের সকল সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য।

তাছাড়া বাচ্চাকে কখনোই অতিরিক্ত গরমে অপরিচ্ছন্ন স্থানে এই সময়টাতে খেলাধুলা করতে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি এলার্জির সমস্যা যদি খুবই তীব্রতর হয়ে থাকে তাহলে একজ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে।

শেষ কথা: আশা করি এলার্জি দূর করার উপায় আপনারা বুঝেছেন। এবং সহজেই আপনি এলার্জি দূর করতে পারবেন। তাহলে আর দেরি কিসের এখনি নিজের এলার্জি দূর করুন।

Leave a Comment